ইসলামের দৃষ্টিতে মরণোত্তর দেহদান

ইসলামের দৃষ্টিতে মরণোত্তর দেহদান

অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে অনেক মরণাপন্ন রোগীর জীবন রক্ষা করা যায়। একজন মানুষ সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, কোনো ভাবেই সে যেন একে অপরের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ না হয় বরং কল্যাণ লাভ করে এটাই ইসলামের শিক্ষা। মানুষ একে অপরের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই মরণোত্তর দেহদানও এমনই একটি কল্যাণকর কাজ।

মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করলে দেহ আল্লাহ পাকের কাছে যায় না বরং যায় আত্মা। আত্মা কেবল দেহকে ত্যাগ করে। আর দেহকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় জানানোর শিক্ষা এ জন্যই দেয়া হয়েছে, যাতে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কোনো ধরনের অমর্যাদা না হয়।

এছাড়া দেহকে যদি সুন্দরভাবে দাফন করা না হতো তাহলে পরিবেশও দুষিত হতো। ইসলাম যেহেতু পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, তাই এর শিক্ষাও পরিপূর্ণ। এছাড়া পবিত্র কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে, আমাদের দেহ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলেও তিনি তা একত্র করতে সক্ষম এবং তা তিনি করবেন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘তারা বলে, আমরা যখন হাড়গোড়ে পরিণত হব এবং চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাব এরপরও কি সত্যিই এক নতুন সৃষ্টির আকারে আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে? তুমি বল, তোমরা পাথর বা লোহা হয়ে গেলেও কিংবা তোমাদের বিবেচনায় এর চেয়েও কঠিন সৃষ্টিতে পরিণত হলেও তোমাদের পুনরুত্থান অবশ্যম্ভাবী। এতে তারা অবশ্যই বলবে, কে পূর্বাবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে আনবে? তুমি বল, যিনি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন, তিনিই। তখন তারা তোমার উদ্দেশ্যে মাথা নাড়িয়ে বলবে, এমনটি কখন ঘটবে? তুমি বল, এমনটি অতি শিগগিরই ঘটতে পারে। যেদিন তিনি তোমাদের আহবান করবেন, অতপর তোমরা তার প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। আর তোমরা অনুমান করবে যে, সামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে’ (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৪৯-৫২)।

এছাড়া আমাদের চোখ, কান, হৃদয় সবইতো আল্লাহর সৃষ্টি। তার সৃষ্ট দেহের অংশ দিয়ে তার আরেক বান্দার উপকার করতে কে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে? এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন- ‘আর তিনিই তোমাদের জন্য কান, চোখ এবং হৃদয় সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর না বললেই চলে। আর তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের বীজরূপে বপন করেছেন এবং তারই দিকে তোমাদের একত্র করা হবে। তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর দিন-রাতের পরিবর্তন তারই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৭৮-৮০)।

তাই আমাদের দেহের কোনো অংশ কারো কল্যাণের জন্য দান করলে আল্লাহ তা’আলার কোনো যায় আসে না, কারণ তিনি আবার সব কিছুই একত্র করতে পারেন এবং করবেন। আর একজনের অঙ্গ আরেক জনের মধ্যে যে প্রতিস্থাপন করা হবে তাও উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) দাজ্জালের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে তা উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আপন শক্তির প্রকাশ করতে সে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে এবং পুনরায় জীবিত করবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।

রাসুল (সা.)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী কি আজ অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়নি? আজ আমরা কী দেখছি, চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের হৃৎপিণ্ড কেটে বের করে রোগীর রক্তবাহী শিরাকে কৃত্রিম যান্ত্রিক হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে রোগীর আসল হৃৎপিণ্ডকে অপারেশনের মাধ্যমে গ্লানিমুক্ত করে যথাস্থানে স্থাপন করে রোগীকে পুনর্জীবিত ও সুস্থ করছে। অপারেশন অবস্থায় রোগী জ্ঞানহারা মৃতবৎ পরে থাকে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা সদ্য মৃত ব্যক্তির সুস্থ হৃৎপিণ্ডকে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সংযোজন করে তাকে সুস্থ করে তুলছে।

এ ধরনের ব্যবস্থাপত্র যে পৃথিবীতে একসময় হবে তার ইঙ্গিত ১৪শ বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলে দিয়েছেন। ইসলামে যদি এসবকে অবৈধ আখ্যায়িত করা হতো, তবে তিনি অবশ্যই আমাদের এসব থেকে বিরত থাকতে বলতেন। রাসুল (সা.) ছিলেন মহাবিজ্ঞানী, তিনি জানতেন এক সময় বিজ্ঞান উন্নতি করবে আর একের অঙ্গ আরেক জন প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হয়ে উঠবে।