কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন: ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির জবাব দিলেন আরাফাত

কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন: ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির জবাব দিলেন আরাফাত

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ১৬০ জনের বেশি বিশ্বনেতার খোলা চিঠির জবাব দিয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।

বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় তিনি চিঠির জবাব দেন।

মোহাম্মদ এ আরাফাত লেখেন, অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়ে বৈশ্বিক নেতাদের চিঠির দ্রুত প্রতিক্রিয়া:

শ্রম আদালতে বিচারাধীন বর্তমান বিচারিক মামলার অভিযোগকারীরা গ্রামীণ টেলিকমের কর্মী। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। শ্রমিকরাই মামলা করেছে এবং এই মামলা নিয়ে তারা কী করতে চায়, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তাদের।

দ্বিতীয় শ্রম মামলাটি শ্রম আইন লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের জন্য শ্রম বিভাগ থেকে করা হয়। অভিযোগগুলো সঠিক নয় এমন কোনো প্রমাণ প্রফেসর ইউনূসের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। যা দাবি করা হয়েছে তা হলো ‘ব্যতিক্রমবাদ’। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।

বাংলাদেশের আইনে বিচারকদের একটি প্যানেল গঠন করে তা পরিবর্তন-পর্যালোচনা করার ক্ষমতা কোনো কর্তৃপক্ষের নেই। শ্রম আদালতে একজন একক বিচারক সভাপতিত্ব করেন। প্রফেসর ইউনূস শ্রম আদালতের বিচারকদের একটি প্যানেলের সামনে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তারপরে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের শরণাপন্ন হবেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, আইন অনুমোদিত সংস্থার তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ সরকারকে অভিযোগ পর্যালোচনা করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিচারকদের একটি প্যানেল গঠন করার অনুমতি দেয়ার কোনো আইন নেই। যেকোনো কর্তৃপক্ষের যেকোনো অভিযোগ পর্যালোচনার জন্য মূলত আইন লঙ্ঘন অভিযোগের তদন্তের প্রয়োজন হয়। দুদক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঠিক সেটাই করছে।

প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খোলা চিঠি লেখেন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ১৬০ জনের বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি। এর মধ্যে আছেন শতাধিক নোবেল বিজয়ীও।

গত সোমবার (২৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যারের ওয়েবসাইটে এই চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। চিঠিদাতাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, আলগোর, তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ১৪ ব্যক্তি রয়েছেন। আছেন জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ৭ জন, রসায়নে নোবেল বিজয়ী ২৮ জন, চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ী ২৯ জন, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ২২ জন এবং ওরহান পামুক, জে এম কোয়েৎসেসহ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ৪ জন।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও সামরিক ব্যক্তিরা রয়েছেন চিঠিদাতাদের তালিকায়।

চিঠিতে যা বলা হয়েছে:

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,

আমরা আপনার কাছে লিখছি নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার দেশ যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা সেটির তারিফ করছি।

যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যে হুমকি দেখা গেছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং দেশের প্রথম সারির দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দুটি নির্বাচনে বৈধতার অভাব রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের প্রতি যেসব হুমকি রয়েছে, তার মধ্যে যেটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে তা হলো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা। আমরা এটি বিশ্বাস করে শঙ্কিত যে সম্প্রতি তাকে ধারাবাহিক বিচারিক হয়রানির লক্ষ্য করা হয়েছে । তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ৪০ জন বিশ্বনেতা আপনার কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই এই চিঠি লেখা হয়েছে।

আমরা সম্মানের সহিত আপনার প্রতি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি। এরপর আন্তর্জাতিকভাবে আইনবিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে দুদক ও শ্রম আইনে যেসব মামলা চলছে, সেগুলো পর্যালোচনা করলে তিনি খালাস পাবেন।

অধ্যাপক ইউনূস যে কাজ করেন, তা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। সামাজিক ব্যবসা কীভাবে আন্তর্জাতিক অগ্রগতি আনতে পারে, তা তিনি দেখিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূর করা এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে, তার নেতৃত্বস্থানীয় দৃষ্টান্ত তিনি। কোনো ধরনের নিপীড়ন ও হয়রানি ছাড়া স্বাধীনভাবে তিনি পথপ্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।

আমরা আশা করি, আপনি এসব আইনগত বিষয়ের যথাযথ, নিরপেক্ষ ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবেন। একই সঙ্গে সব ধরনের মানবাধিকার রক্ষার প্রতি সম্মান নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে এসব বিষয়ের সমাধান দেখার জন্য বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নজর রাখছে। সে কাতারে আমরাও আছি।