এত অল্প বয়সেই নায়িকা হব, ভাবিনি...

এত অল্প বয়সেই নায়িকা হব, ভাবিনি...

পাত্রপাত্রীদের সবাই তরুণ। তাঁদের নিয়ে পরিচালকের গন্তব্য নড়াইল। শুটিং স্পটে সাধারণত শিল্পীদের থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা থাকে। তবে এখানে সেসবের বালাই নেই। অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের নির্ধারিত কোনো থাকার জায়গা নেই। থাকার জায়গা ও শুটিং লোকেশনের জন্য পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়স্বজনই ছিল ভরসা। টিমের কেউ কেউ হোটেলে থেকেছেন, কেউ থেকেছেন ক্যাম্প করে। কারণ, সিনেমার বাজেট খুব কম। থাকা–খাওয়ার জন্য বাড়তি বিলাসিতার সুযোগ নেই। পরিবারের মতো সবাই মিলে কাজটি করছেন। ইনডিপেনডেন্ট ঘরানার এই সিনেমার নাম ‘উড়াল’। গত মঙ্গলবার নড়াইলে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছে। এটি পরিচালনা করছেন জোবায়দুর রহমান। 

শুটিংয়ে অংশ নেওয়া তরুণদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ২১। কারও প্রথম অভিনয়। কেউ দু-একটি সিনেমা বা নাটকে অভিনয় করেছেন। কিন্তু কেউই সেভাবে পরিচিত নন। মঞ্চে অভিনয়, নাচ, গান শিখে ক্যারিয়ার গড়ার পথে হাঁটছেন। সবাই সিনেমায় সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তরুণদের বন্ধুত্বের গল্প নিয়েই এগিয়েছে সিনেমাটি। 

পরিচালক বলেন, ‘গল্পের জন্য সেলিব্রিটি কাউকে চাইনি,পারফরমার খুঁজেছি। সেভাবেই আমার টিম গঠন করেছি। সিনেমায় একজনও পরিচিত মুখ নেই। এসবই গল্পের প্রয়োজনে।’

জোবায়দুর আরও বলেন, ‘তারকা নিলে হয়তো সুবিধা পেতাম, ফেস ভ্যালুর দিক থেকে এগিয়ে থাকতাম। কিন্তু আমরা অডিশন নিয়েছি। কে শুটিংয়ে সময় দিতে পারবে, সেভাবে শিল্পী বাছাই করেছি। আবার অভিনয়শিল্পীদের কার কবে পরীক্ষা, কী কাজ আছে—এসব জেনে শিডিউল করেছি। মাঝে অনেকেই ব্যস্ততায় ছেড়ে গিয়েছেন। আবার অন্যদের নিয়েছি। কিন্তু আমরা কাজে কোনো ছাড় দিচ্ছি না। পাঁচ কি ছয় মাস ধরে গ্রুমিং করেছি। দেশের কোনো তারকা কি এত সময় দেবেন? দিনের পর দিন গল্প নিয়ে বসবেন? সেই জায়গা থেকে আমরা অভিনয়, নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকদের ভিন্ন স্বাদের সিনেমা উপহার দিতে চাই।’

এই সিনেমায় অভিনয়শিল্পীদের একজন মাহাফুজ মুন্না। তিতুমীর কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে অভিনয়ই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। পরিবার থেকে চাকরির চাপ থাকলেও তাঁদের বুঝিয়ে অভিনয় করছেন আরণ্যকের এই থিয়েটারকর্মী। সিনেমায় তাঁর চরিত্রের নাম মতি। দীর্ঘ সময় তিনি সিনেমার সঙ্গে জড়িত। বাড়তি কোনো আয় নেই। কীভাবে সব ব্যবস্থা করেছেন, এমন প্রশ্ন করা হলে এই তরুণ বলেন, ‘একটা পরিবার হলে যা হয়। একজন অন্যজনের পাশে দাঁড়ায়। আমরা নিজেদের টাকা ভাগাভাগি করে চা–শিঙাড়া–নাশতা খেয়েছি। শিল্পকলা, মধুবাগ, নিকেতনসহ অনেক জায়গায় অনুশীলন করেছি। আমাদের কাছে কাজটা ছিল সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কাজটাকে ভালোবেসেছি।’

পর্দায় তিন বন্ধু ও এক তরুণীর গল্পই উঠে আসবে। তিন বন্ধুর মধ্যে বোঝাপড়া তৈরির জন্য পরিচালক তিন অভিনয়শিল্পীকে একসঙ্গে আড্ডার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিন বন্ধু শুটিংয়ে একসঙ্গে থাকছেন। আরেক বন্ধু সোহেল তৌফিক বললেন, ‘আমাদের তিনজনের আগে তেমন পরিচয়ই ছিল না। দেখা হতো। হয়তো ভাই বলতাম। এখন আর ভাই নেই। আমরা একসঙ্গে সিনেমার প্রয়োজনে আড্ডা দিতে গিয়ে ভাই থেকে বন্ধু হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে, আমরা শৈশবের বন্ধু। আমাদের অনেক দিনের পরিচয়। শুটিংয়েও দারুণ আড্ডা জমছে।’

সিনেমাটিতে আরও আছে খুশি কাব্য কথা। চট্টগ্রামে নাচ শিখেছিল। ইচ্ছা ছিল নায়িকা হওয়ার। তাই দুই বছর আগে ঢাকায় আসে। এখন সে নবম শ্রেণির ছাত্রী। এরই মধ্যে নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছে। তার চরিত্রের নাম কুমকুম। দুরন্ত এক গ্রামের মেয়ের চরিত্রে তাকে দেখা যাবে। কাব্যকে অভিনয়ের জন্য যেতে হয়েছে নড়াইল। সঙ্গে রয়েছেন তার মা। পর্দায়ও তাঁরা মা-মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন। সিনেমায় মায়ের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হবে। নিজের কাজ নিয়ে কাব্য বলল, ‘এত অল্প বয়সেই নায়িকা হব, ভাবিনি। অল্পতেই যেহেতু বড় সুযোগ পেয়েছি, তাই সাবধানে পা ফেলতে চাই। আর প্রথম দিন অভিনয় করে ভালোই লেগেছে। কাহিনির সঙ্গে মিশে গেছি।’

প্রযোজক শরীফ সিরাজ জানালেন, নড়াইলের পর দিনাজপুরের পার্বতীপুরসহ বেশ কিছু লোকেশনে ১৫ দিন ধরে চলবে সিনেমাটির শুটিং। শরীফ সিরাজ চরকির ‘ইউটিউমার’ ওয়েব সিরিজে ‘জ্যাকসন ভাই’ হিসেবে পরিচিতি পান। এখন নিয়মিত অভিনয় করছেন। গত ঈদে একই প্ল্যাটফর্মের সিরিজ মারকিউলিস-এও দেখা গেছে তাঁকে। শরীফ বলেন, ‘এখানে আমি চাইলে অভিনয় করতে পারতাম। কিন্তু দেখলাম, এখানে আর কোনো পরিচিত মুখ নেই। তখন মনে হলো সবাই অপরিচিত হলে গল্প বর্ণনার জায়গা আরও দারুণ হবে।’