এডিসি হারুনকাণ্ড: শাহবাগ থানায় রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রলীগের নাঈম

এডিসি হারুনকাণ্ড: শাহবাগ থানায় রোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ছাত্রলীগের নাঈম

শাহবাগ থানায় নিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম। 

নাঈম বলেন, রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুন ভাই আমাদের পূর্বপরিচিত। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি বারডেম হাসপাতালে যেতে বলেন। হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখি মামুন ভাইয়ের স্ত্রী সানজিদা এবং এডিসি হারুনের সঙ্গে তর্ক করছেন মামুন ভাই। স্ত্রীর সঙ্গে এডিসি হারুনের সম্পর্কের বিষয়টি মামুন ভাই হয়তো আগে থেকেই জানতেন। আমি কিছুক্ষণ পরে সেখানে যাই। পরে এডিসি হারুন শাহবাগ থানায় ফোন দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, দুই পরিদর্শকসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডাকেন। 

নাঈম বলেন, শাহবাগ থানার ওসি ছাত্রলীগের আরেক নেতাকে দুই হাত দিয়ে দুই কানে এলোপাতাড়ি থাপড়াচ্ছিলেন। এভাবে থাপড়াতে থাপড়াতে তাকে থানায় নিয়ে যান। এ সময় এপিএস মামুন ভাইকেও দুই হাত পিছমোড়া করে নিয়ে যায় থানায়। যে কক্ষে মামুন ভাইকে বসিয়ে রাখা হয়, সেখানে আমি প্রবেশ করি। তারা মামুন ভাইকে চড়-থাপ্পড় মারছিল। আমি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সবাই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

এডিসি হারুন বলেন, এই ধর ধর ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী। এর পর প্রায় ১০ থেকে ১২ জন সদস্য আমাকে লাথি, চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। মুখ নিরাপদ রাখতে আমি দুই হাত দিয়ে ধরে রাখি। এ সময় এডিসি হারুন একটি পিস্তলের পেছনের অংশ দিয়ে আমার মুখের সামনের অংশে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। 

বর্তমানে শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, সামনের অনেকগুলো দাঁত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু পড়ে যায়নি। নাকের ওপরের অংশের হাড় ভেঙে গেছে। নাকের সার্জারি করতে হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। তরল ও নরম খাবারের বাইরে কিছুই খেতে পারছি না।

শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশীদ। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হারুনকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়। 

এ ঘটনায় ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ গতকাল দাবি করেন, এডিসি হারুনকে প্রথমে মারধর করেন সানজিদার স্বামী এপিএস আজিজুল হক মামুন। সেই ঘটনাও তদন্ত করা উচিত।

এর পরই বারডেমে সেদিন কী ঘটেছিল সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।  

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত, সেই নারী এডিসি সানজিদার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হারুনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়ান বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বেশ কয়েক মাস ধরে তার স্বামী ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল গোপনে নজরদারি করছিলেন। ঘটনার পর ডিএমপি সদর দপ্তরে কর্মরত এডিসি সানজিদা অন্তরালে থাকলেও মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন গণমাধ্যমে। তার দাবি, স্বামী মামুনই প্রথম এডিসি হারুনের গায়ে হাত তোলেন।