ইমরানকে না সরালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে ইমরান খানকে না সরালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তান নিরপেক্ষ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি গোপন বৈঠক থেকে ইমরানকে সরানোর জন্য বলা হয়। পাকিস্তানের সরকারি নথির বরাত দিয়ে আমেরিকানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানি রাষ্ট্রূদত ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাদের মধ্যে গত বছরের ৭ মার্চ একটি বৈঠক হয়। সেখানে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানে সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিরোধীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই নিয়ে আলোচনা হয়।
এরইমধ্যে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান। এ মামলায় তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইমরানের সমর্থকরা। ধারণা করা হচ্ছে, এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ইমরান।
ইন্টারসেপ্ট জানায়, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের এক মাস পরই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা হারান ইমরান। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের সংসদের ওই ভোটে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রভাব ছিল। ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ইমরানের সমর্থকরা পাকিস্তান সরকার ও সেনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। এদিকে ক্ষমতা হারানোর পর ইমরান দাবি করেন, বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।
২০২১ সালের মার্চের শেষে এক সমাবেশে একটি চিঠি দেখিয়ে ইমরান খান জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব একটি ষড়যন্ত্র এবং এতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নামও উল্লেখ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি সূত্র ইন্টারসেপ্টকে গোপন নথিগুলো দিয়েছে। সিক্রেট নামের ওই নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইমরানকে সরালে পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা হবে। আর না হলে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই মস্কো সফর করেন ইমরান। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে বৈঠকে বসেন পাকিস্তান সরকার ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কারণ ইমরানের মস্কো যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এ বৈঠকের একদিন আগেই ইমরান এক সমাবেশে বলেন, আমরা কি দাস? কী ভাবেন আপনারা? আমরা রাশিয়ারও বন্ধু, যুক্তরাষ্ট্রেরও বন্ধু। আমরা চীনের বন্ধু। ইউরোপেরও বন্ধু। আমরা কোনো জোটের অংশ না।
নথিতে দেখা যায়, গোপন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
লু সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ নিয়ে অবস্থান না পাল্টালে পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কের অবনতি হবে।
এ নথির বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায় না যে পাকিস্তানের নেতা কে হবে তা যুক্তরাষ্ট্র নির্ধারণ করে দিচ্ছে। ওই গোপন বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজিও হননি মিলার।
গোপন নথি অনুযায়ী, বৈঠকের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। এসময় লু বলেন, ইমরানকে সরালেই সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ওই গোপন বৈঠকের পরদিন অর্থাৎ ২০২১ সালের ৮ মার্চ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের কার্যক্রম শুরু হয়। এর এক মাস পর ক্ষমতা হারান ইমরান।