আদালতের রায়কে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে প্রতিনিয়ত আদালতের রায়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। একটি মামলা করার পর দীর্ঘদিন ঘুরে আইনেই সকল প্রক্রিয়া শেষ করে চুড়ান্ত রায় পায় একজন বিচার প্রার্থী। আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেলা প্রশাসন যখন রায়ের বাস্তবায়ন না করে তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় আদালতের রায়। আর এমনটাই ঘটছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনে মামলার রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসককে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা থাকলেও মাদারীপুরের শত শত বিচার প্রার্থী তাদের পক্ষে সর্বশেষ রায় পেলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
জেলার রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা ভুক্তভোগী অসিম কুমার জানান, তার বাবার নামের জমি ‘ক’ তফসিলভুক্ত হয়ে একটি গেজেট করে সরকার। সেই গেজেটে নিদৃষ্ট একটি সময় বেধে দিয়ে বলা হয়েছে ভুলবশত কারো জমি যদি ‘ক’ তফসিলভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে তারা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনে আদালতে মামলা করতে পারবে। যেহেতু তার জমির সকল বৈধ কাগজপত্র আছে তাই সে আদালতে নিয়মানুযায়ী সরকারের পক্ষে মাদারীপুর জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন শুনানী শেষে সেই মামলার রায় অসিমের পক্ষে পায়। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। সেই আপিলও খারিজ করে দেয়া হয়। আপিল খারিজ হওয়ায় আর কোন আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই জেলা প্রশাসনের। তাই মামলার রায় অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে জমিটি অবমুক্তি করে নামজারি করার অনুমোতি দেয়ার কথা জেলা প্রশাসকের। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও কোন প্রতিকার পাননি অসিম। তাই তিনি মাদারীপুর আদালতে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলা করেন।
সদর উপজেলার ভুক্তভোগী আবু তাহের জানান, অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুানালে তাদের একটি জমি অবমুক্তির জন্য ২০১৩ সালে মামলা করেন। ২০১৯ সালে তাদের পক্ষে রায় পান। এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আপিল করা হলে সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়। সেই থেকে সকল প্রকার কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেনি জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলার আইনজীবী এডভোকেট প্রদীপ চন্দ্র সরকার বলেন, জেলা প্রশাসক আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে আদালতের রায়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এটা আদালত অবমাননার সামিল। তাই তার বিরুদ্ধ আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে হাতে গোনা দু’একজন মামলা করছে। কিন্তু এ ধরণের মামলায় আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়া ভুক্তভোগী আছে শত শত।
মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট এমদাদুল হক খান বলেন, আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করা আইনেই ব্যপ্তয়। কিন্তু আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করলে কি হবে আইনে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় রায় বাস্তবায়ন না করার সুযোগ নিচ্ছে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হলে আদালতের উপর আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ, মনে করেন মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি খান মো. শহীদ।
জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইনে মামলার রায় পাওয়া শতাধিক ব্যক্তির ফাইল আটকে থাকলেও এবিষয় কোন কথা বলতে রাজি হননি মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।
আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালতের রায় যথাযথভাবে পালন করতে জেলা প্রশাসকে কঠোর নির্দেশনা দেয়ার দাবি ভুক্তভোগী বিচার প্রার্থীদের।