যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অস্বস্তি, নানা গুঞ্জন

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অস্বস্তি, নানা গুঞ্জন

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগে ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন কর্মকর্তার নাম এই তালিকায় রয়েছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।

যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। আমেরিকার ভিসানীতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর আরোপ করা হয়েছে, তবে তারা কারা তা জানি না। যদি ভিসানীতি আসে, তারা হয়তো দেশটিতে যেতে পারবেন না। ভিসানীতির কারণে দায়িত্ব পালনে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না।

তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এলিট ফোর্স র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের ওপর নতুন করে ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়টি অস্বস্তি বাড়িয়েছে। পুলিশের বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। এখন অন্যান্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর ভিসানীতির প্রয়োগ হওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়তে পারেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন সদস্যদের নাম প্রকাশ না করা হলেও অনেকেই ভেতরে ভেতরে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুযায়ী, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বল প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন ভিসানীতি প্রয়োগের তালিকায় তাদের নামও থাকতে পারে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার বিষয়ে নানারকম গুঞ্জন রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম প্রধান ইউনিট ডিএমপিতে কর্মরতসহ বিভিন্ন ইউনিটের আলোচিত ও সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তারা এই তালিকার আওতায় পড়তে পারেন। আলোচিত এই কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকের স্ত্রী-সন্তানেরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন বলেও জানা গেছে। এ কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়টি মানসিক চাপে পরিণত হয়েছে তাদের। অনেকেই যথাযথ দায়িত্ব পালন করতেও ভয় পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র জানায়, শুধু ঢাকায় নয়, ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি জেলার পুলিশ সুপারসহ অনেক পুলিশ সুপারও এই ভিসানীতি প্রয়োগের তালিকায় রয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আপাতদৃষ্টিতে ভিসানীতির প্রভাব কর্মক্ষেত্রে না পড়লেও যাদের স্ত্রী-সন্তানেরা ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাস করেন, তাদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ওই কর্মকর্তারা এখন থেকে নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করবেন। অবশ্য ভিসানীতির আলোচনার পর থেকেই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একাধিকবার বিভিন্ন ইউনিটকে আইনের মধ্যে থেকে এবং মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাউকে অতি-উৎসাহী হয়ে এমন কোনও কাজ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ সদস্যদের যার যে দায়িত্ব সেটা যথাযথভাবে পালন করলে, ভিসানীতি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর মার্কিন ভিসানীতি দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের কাজের ওপর কোনও ধরনের প্রভাব পড়বে না। পুলিশ সদস্যদের কেউ যদি এই তালিকায় থেকেও যায়, তবু গুটিকয়েক সদস্যের জন্য এত বড় শৃঙ্খল বাহিনীর মূল কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না।’

সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘শুধু মানবাধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করলে, ভয়ের কিছু নেই। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। অতিরিক্ত কিছু না করলে বা বাড়বাড়ি না করলে কিছু হবে না।’