চরভদ্রাসনে অবাধে চলছে চায়না দুয়ারীর ব্যবহার
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে মাছ শিকারে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে চায়না দুয়ারী। পদ্মা নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিলে এসব নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী পেতে ধ্বংস করা হচ্ছে দেশী প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। সংশ্লিষ্টদের নাকের ডগাতেই সারা বছরই চলে এ ধ্বংসযজ্ঞ।
চরভদ্রাসনে চায়না দুয়ারীর ইতিহাস খুব বেশী পুরনো নয়। ২০১৫ সালের দিকে চরভদ্রাসনে প্রথমে অল্পবিস্তর এ চায়না দুয়ারীর ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় ২২ মিটার দৈর্ঘের একটি দুয়ারীর দাম ছিল ৭ থেকে আট হাজার টাকা। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে এবং হারিয়ে যেতে থাকে বাঁশের তৈরি দুয়ারী। বর্তমানে এ দুয়ারীর ব্যবহার ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এখন সব থেকে ব্যবহার হয়ে থাকে ১৯ মিটার দৈর্ঘের চায়না দুয়ারী। যার মূল্য তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। চরভদ্রাসনের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অধিকাংশ জেলেই এ দুয়ারী ব্যবহার করে থাকেন।
মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রাম সংলগ্ন পদ্মা নদীতে দেখা যায় প্রায় পাঁচশত মিটার দীর্ঘ ও চারশত মিটার প্রস্থ জলসীমায় অসংখ্য বাঁশ পুতে রাখা হয়েছে। প্রথমে দেখে বোঝার উপায় নেই কি কারণে পদ্মা জুড়ে এ বাঁশ। কৌতুহলবসত স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই বাঁশের সাথে চায়না দুয়ারী পাতা রয়েছে। সে সময় লক্ষ্য করা যায় নদীর পাড়ে সারি-সারি চায়না দুয়ারী রোদে শোকনো হচ্ছে। এছাড়া চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের কল্যানপুর, চর গোপালপুর, চর হরিরামপুরের নমুর ছাম, পাঁচ নম্বর কোল, সদর ইউনিয়নের লোহারটেক কোল, গোপলপুর ঘাট এলাকায় সারা বছরই এরকম বাঁশ পুতে চায়না দুয়ারী পাতা হয়।
নাম প্রকাশ না করে অনেকেই বলেন, এসব বিষয়ে অবগত রয়েছে মৎস্য দপ্তর। বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মো. মোতাহার হোসেন (৬৯) বলেন, চায়না দুয়ারীর ব্যবহার রোধ করা না গেলে অচিরেই আমরা মাছের সংকটে পরব।
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সেখ সালাম বলেন, চায়না দুয়ারীর ব্যবহার এখন অনেক বেশি বেড়েছে। এর ব্যবহার রোধে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
চরভদ্রাসন ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আত্তাফ মুন্সি বলেন, বর্তমান সময়ে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে চায়না দুয়ারী। এর ফলে দেশীয় বাঁশের তৈরি চাঁই বা দুয়ারী বিলুপ্তির পথে। চায়না দুয়ারীর দুই দিকে মুখ ও যে কোনো স্থানে পাতা যায় বলে একচেটিয়া ভাবে ধরা পরে বিভিন্ন জাতের মাছ।
নদীতে অনেক চায়না দুয়ারী আছে এমন কথা স্বীকার করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের মাসে একটি অভিজান ও একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে গিয়ে কিছু করার নেই। আমাদেরকে আমাদের মতো করেই সাধ্য অনুযায়ী অভিযান চালাতে হয়।