কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলন, লাভবান কৃষকরা
পিরোজপুরের কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফলন। পুষ্টিকর ফল আমড়ার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। এ মৌসুমে বাজার ছাড়াও পথে পথে প্রচুর বিক্রি হয় এই ফল। আমড়ার চাষ ও উৎপাদন বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কাউখালী উপজেলায় চলতি মৌসুমে গত দুবছরের তুলনায় আমড়ার ফলন ভালো। তবে আমড়া চাষিদের মুখে সেই হাসির রেখাটি বিস্তৃত নয়। কৃষি অধিদফতরও বলছে, এবার কাউখালীতে আমড়ার বাম্পার ফল হয়েছে।
বিভিন্ন লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাসে আর রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের সর্বত্রই প্রতিনিয়ত হকারদের ডাক শোনা যায় ‘লাগবে বরিশালের আমড়া’। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এর ফলন বেশি বিধায় বরিশালের আমড়া বলেই পরিচিতি বেশি। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা, ভান্ডারিয়া স্বরূপকাঠী ও নাজিরপুরে আমড়া আবাদ হয় বেশি। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে আমড়ার চাষ হয়।
ওই এলাকায় এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে কম করে হলেও একটি আমড়া গাছ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ির উঠোনে একটি আমড়া গাছ লাগানো যেন প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ পতিত জমি কেটে আইল তৈরি করে, আবার কেউ কেউ ফসলি জমিতে আমড়ার বড় বড় বাগান করেছেন। কোনো কোনো চাষীর বাগান থেকে বছরে লাখ টাকা আয় হয়।
শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে পরিপক্ব আমড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় আমড়া কেনা-বেচার বেপারী রয়েছে। তারা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কুড়ি দেখেই আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে ফেলেন। আবার অনেক চাষি ভরা মৌসুমে নিজেরাই বাজারে আমড়া বিক্রি করেন। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গাছ থেকে আমড়া পেড়ে বাজারে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়।
কাউখালী উপজেলার লঞ্চঘাট, দক্ষিণ বাজার, বেকুটিয়া, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন বড় বাজারে রয়েছে আমড়ার আড়ৎ। এসব আড়তে বেপারীদের কাছ থেকে আমড়া কিনে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় চালান করা হয়। সেখানে আড়তদাররা বিভিন্ন মোকামের খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের কাছে আমড়া বিক্রি করে।
কাউখালীর ডুমজুরী গ্রামের রুবেল জানান, মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া উৎপাদনকারী গৃহস্থরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কারণেও আমড়া বেচাকেনার মুনাফার পুরোটা যায় না চাষিদের পকেটে। সে কারণেই আমড়া চাষিরা বাম্পার ফলনে খুশি হয়েও খুশি নন।
ব্যাপারীরা গৃহস্থদের কাছ থেকে এক বস্তা আমড়া ৭০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায় কিনে কাউখালী মোকামে বিক্রি করে থাকেন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। কাউখালী থেকে ঢাকায় বিক্রি হয় ১৮০০ থেকে দুই হাজার ৫শ টাকায়।
কাউখালীর আড়তদাররা বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভাদ্র মাসের প্রথম থেকেই আমড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলন বেশি হওয়ায় প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মণ আমড়া বস্তা ভরে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।
আড়তদাররা আরও জানান, কাউখালীতে আমড়ার আড়ৎ খুলে সেখান থেকে প্রান্তিক চাষিদের থেকে আমড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকাররা ট্রাক, পিকআপ, লঞ্চে ঢাকা, চাঁদপুর নিয়ে যান। সেখান থেকে কাঁচা আমড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।
কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোমা রানী দাস বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমড়া চাষিদের সব রকমের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর ভালো ফলন পেয়েছে চাষিরা। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। অর্থকারী ফসল হওয়ায় কৃষকরা আমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন।