বাইডেনের সেলফি: যত ব্যাখ্যা
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ এর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছবি এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচনার বিষয়। এই ছবির মাধ্যমে কি প্রমাণ হয়? এই নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে, এই ছবি বিএনপির ঘুম হারাম করে দিয়েছে। তবে বিএনপির ঘুম হারাম করেছে কি করেনি সেটা বড় কথা নয়। বিএনপির নেতাদের মনোভাব যাই হোক না কেন, কর্মীরা এই সেলফিতে ধাক্কা খেয়েছে এটা বলাই বাহুল্য। তবে এই ছবির মানে কি—এই নিয়ে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ চলছে। এ পর্যন্ত এই ছবির পাঁচটি ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আমরা পাঁচটি ব্যাখ্যাই উপস্থাপন করছি। পাঠক, আপনি মিলিয়ে নিন আপনার ব্যাখ্যার সাথে এই পাঁচটি ব্যাখ্যা মেলে কিনা;
ব্যাখ্যা-১, স্রেফ সৌজন্যতা: যারা কূটনৈতিক পাড়ায় বেশি ঘোরাফেরা করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, রাজনীতি ইত্যাদির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা বলছেন, এই ছবির আলাদা কোনো তাৎপর্য নেই। এটা স্রেফ জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হাস্যজ্জোলভাবে কথা বলেছেন, করমর্দন করেছেন, তার হাত ধরে শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলেছেন। সায়মা ওয়াজেদকে সঙ্গে নিয়ে শেখ রেহানার সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কাছ থেকে কার্ড চেয়ে নিয়েছেন। এসবই সৌজন্যতা এবং আনুষ্ঠানিকতা। জো বাইডেন এমনিই একজন সজ্জন, ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। মার্কিন রাজনীতিতে তারা যাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা জানেন যে তার ভদ্রতা এবং শিষ্টাচার অনেক উঁচুতে। এ কারণেই তিনি এই সমস্ত করেছেন। এর সাথে রাজনীতি বা অন্য কোন কিছু জড়ানো সঠিক হবে না।
ব্যাখ্যা-২, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বরফ গলেছে: আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই ব্যাখ্যাটি দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে দূরত্ব এবং সম্পর্কের অস্বস্তি ছিল সেটি কেটে গেছে। বাইডেন যদি আওয়ামী লীগের ব্যাপারে নেতিবাচক থাকতো, বর্তমান সরকারের ব্যাপারে নেতিবাচক থাকতো তাহলে এরকম ছবি তুলতেন না। এই ছবির মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, বাইডেন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বা কিছুটা নমনীয় হয়েছে। এই ব্যাখ্যাটি আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং আওয়ামী লীগের নেতারা এরকম ব্যাখ্যায় খুশি।
ব্যাখ্যা-৩, বাইডেন কিছু না, দেশ চালায় সিআইএ, এফবিআই: জো বাইডেনের ছবির ওপর আরেক রকম ব্যাখ্যা এসেছে। এই ব্যাখ্যাটি দেওয়া হয়েছে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে গভীর পড়াশোনা করেন তাদের পক্ষ থেকে এই ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসলে কিছুই না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি এবং কর্মপন্থা নির্ধারণ করে এফবিআই, সিআইএ সহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেভাবেই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কাজ করতে হয়। অনেক বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানেন না। তাকে শুধু সামনে রাখা হয়। তারা মনে করছেন যে, এই ছবি কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বা নীতির কোন পরিবর্তন হয়েছে। বরং এই ছবির মধ্যে প্রমাণিত হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আসলে বাংলাদেশ বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রেসিডেন্টের মতো ক্ষমতাবান নন। বরং সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যা করে সেই অনুযায়ী তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
ব্যাখ্যা-৪, ঝড়ের আগে আলামত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি সৌজন্যতা, অতি ভদ্রতা অনেক সময় একটি দেশের জন্য ক্ষতিকর—এমন একটি ব্যাখ্যাও এখন দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত যারা বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বামপন্থায় বিশ্বাসী তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে এরকম একটি ব্যাখ্যা সামনে হাজির করেছেন। তারা মনে করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারো বন্ধু হতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের বন্ধু তার শত্রুর অভাব হয় না। আর এ কারণেই জো বাইডেনের এই ছবিটি একটি ঝড়ের আলামত হিসেবে তারা মনে করছেন।
ব্যাখ্যা-৫, ভারতকে খুশি করতেই সেলফি: জো বাইডেনের এই ছবি ভারতকে খুশি করার জন্য—এমন ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তারা মনে করেন যে, জো বাইডেন দিল্লিতে গেছেন নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে। এখানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত একটি পার্টনার। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাইরে যে যাবে না বা ভারতকে খুশি করার জন্যই এরকম একটি নাটক সাজিয়েছেন। এর মাধ্যমে ভারতের হৃদয় জয় করতে চেয়েছেন জো বাইডেন।
ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন এই সেলফি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ যে সরগরম থাকবে সেটা বলাই বাহুল্য।