বঙ্গবাজারে আগুন: ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই
সাত ঘণ্টা আগে রাজধানীর গুলিস্তান বঙ্গবাজারে লাগা আগুন এখনও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও মাঝে মাঝে আগুন দেখা যাচ্ছে।ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের সঙ্গে কাজ করছে সেনা, নৌ, বিজিবি ও বিমান বাহিনী। এছাড়াও আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ফায়ার সর্ভিস।
ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে জানিয়ে তাদের আর্তনাদ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনের কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে বঙ্গবাজারের আকাশ। ভয়াবহ এ আগুনের কারণে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগুনের তীব্রতাও বাড়ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডার ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের মায়ের দোয়া গার্মেন্টসের মালিক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ভোরের দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে এসেছি।
আরও কয়েকজন দোকানি ততক্ষণে চলে এসেছিলেন। আমরা মার্কেট থেকে মালামাল বের করে আনার চেষ্টা করেছিলাম। তবে, ধোঁয়ার কারণে ১০ ভাগের একভাগ মালামালও বের করে আনতে পারিনি। আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বঙ্গবাজারের ইভা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম জানান, আসন্ন ঈদের আগে নতুন মালামালসহ তার দোকানে ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মালামাল ছিল। কিন্তু আজ সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সোমবার রাতে দোকানে ব্যবসার ৩০ লাখ টাকা রেখেছিলেন এসএম গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী সোহেল। রাত হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকে দিতে পারেননি তিনি। আগুন লাগার খবর পেয়ে রাজধানীর মিটফোর্টের বাসা থেকে আজ আসতে আসতে তার সব টাকা পুড়ে ছাই। কেঁদে কেঁদে সোহেল বলেন, ‘আমার তিনটা দোকান গোডাউন মিলে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাল ছিল। মাল যায় যাক, কিন্তু আমার ৩০ লাখ টাকা সব শেষ।’
ক্ষতিগ্রস্ত আরেক ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগুনে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। ঈদের আগে বেচাকেনার জন্য দোকানে মাল ঠাসা ছিল। কিন্তু একটি মালও রক্ষা করতে পারলাম না। ২০/২২ লাখ টাকার শার্ট, প্যান্ট সব শেষ হয়ে গেছে’।
মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের দোকানি লাবলু বলেন, একেবারে রাস্তার পাশে যাদের দোকান ছিল তারা বের করে আনতে পেরেছেন। আমাদের দোকানের ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই আনতে পারিনি। যারা এনেছেন তাও খুবই নগণ্য। রোজার ঈদে ব্যবসায়ীরদের বাড়তি স্বপ্ন থাকে। সবার স্বপ্নই আগুনে পুড়েছে।
ইমরান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু তিনি নন তাদের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের এখানে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে তারা দোকানে নতুন মালামাল তুলেছেন। এজন্য কেউ-কেউ ধার-দেনাও করেছেন। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে ঈদ কেন্দ্রিক তাদের এ স্বপ্ন। আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কীভাবে পরিবারের ভরণপোষণ করব জানি না।
এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ৫০টি ইউনিট। পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল, বিজিবির সদস্যরা, নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল ও একটি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।