দুই মেয়েকে নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না জাপানি মা

দুই মেয়েকে নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না জাপানি মা

জাপান থেকে আসা দুই সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজের বিরুদ্ধে করা আপিল তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে মামলাটির ওপর স্থিতিবস্থা (স্ট্যাটাসকো) রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে জাপানি মা নাকানো এরিকো দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আকতার ইমাম। আর মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। আর ছোট মেয়ে থেকে যান জাপানে মা এরিকোর সঙ্গে।

তবে ওই দুই মেয়েকে জিম্মায় পেতে মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করাতে রিট করেছিলেন তিনি। ওই রিটের পর ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট শরীফ ইমরানের জিম্মায় থাকা দুই শিশু সন্তানকে একই বছরের ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিচারক তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন।

পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা পৃথক মামলা দায়ের করলে শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এরপর তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিল।

ইমরানের জিম্মা থেকে দুই শিশু সন্তানকে সিআইডি উদ্ধারের পর তাদের ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

পরে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট দুই শিশুকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে গুলশানে একটি বাসায় বাবা ও মায়ের সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকার সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিলো।

ওই সময়ের মধ্যে তাদেরকে বিষয়টির সুরাহা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তীতে কয়েক দফায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে এ বিষয়ে কোনও সুরাহা না হওয়ায় মামলাটি পুনরায় শুনানিতে ওঠে।

এদিকে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ জাপানে থাকা তার তৃতীয় ছোট কন্যাশিশুকে হাজির করানোর ও দেখা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আরেকটি রিট দায়ের করেছিলেন।