ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালীতে বেপরোয়া মৌসুমি জেলেরা; অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন

ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালীতে বেপরোয়া মৌসুমি জেলেরা; অবাধে চলছে মা ইলিশ নিধন

কামরুজ্জামান সুইট ,ঝালকাঠি:: ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীতে মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞায় প্রশাসনের সাথে চোর-পুলিশ খেলায় নেমেছে মৌসুমি জেলারা। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানের পরও কোনোভাবেই থামছে না মা ইলিশ শিকার। নিষেধাজ্ঞার ৫ দিনে কিছু জাল জব্দ ছাড়া তেমন কোনো সাফল্য নেই জেলা মৎস্য অফিসের।

নদীতে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বিষখালী নদীর হদুয়া লঞ্চঘাট, পুরান হদুয়া বাজার, নলবুনিয়া, ভবানীপুর, ইসলামপুর,পালট,আমিরাবাদ,দেউড়ি, তেতুলবাড়িয়া লঞ্চঘাট,বাদুরতলা,চল্লিশকাউনিয়া,নাপিতের হাট ও সুগন্ধা নদীর অনুরাগ, দপদপিয়া, মাটিভাঙাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে অবাধে মা ইলিশ নিধন। মাছ ধরা ডিঙ্গি নৌকায় ইঞ্জিন চালিত মেশিন বসিয়ে দ্রুতগতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নদীতে। যে কারনে প্রশাসনের লোক নদিতে দেখলেই এসকল মৌসুমি জেলেরা দ্রুত গতিতে প্রশাসনের চোখের সামনে থেকেই পালিয়ে যায়। 

কয়েকজন জেলে জানায়, আগে নদীতে জাল ফেললে দু-চারটা ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু এ সময়ে (নিষেধাজ্ঞা চলাকালে) নদীর নির্দিষ্ট পয়েন্টে জাল ফেলতে পারলেই ডিমওয়ালা ইলিশের সঙ্গে প্রচুর ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। মৌসুমি জেলেরা কতিপয় পেশাদার জেলেদের মা ইলিশ শিকার করে নদীর তীরের ঝোঁপ-জঙ্গলে ও কচুরিপানার মধ্যে মাছ লুকিয়ে রাখছে এরপর সুযোগ বুজে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। প্রতিনিয়ত দেখাযায় মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলে গিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে সস্তায় এসব মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন লোকজন।

নিষেধাজ্ঞার সময় কার্ডধারী কোনো জেলে মা ইলিশ শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে ‘জেলে কার্ড’ বাতিলসহ তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে প্রশাসনের এমন সর্তকতা কারণে কার্ডধারী অনেক জেলে নিজে নদীতে না নেমে নৌকা ও জাল দিয়ে মৌসুমি জেলেদের সহযোগিতা করছেন। এজন্য মাছের একটা ভাগ নিচ্ছেন তারা। এলাকার কিছু লোক নৌকা তৈরি করে মৌসুমি জেলেদের কাছে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। 

এছাড়াও প্রশাসন নদীতে অভিযানে নামলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের মোবাইলফোনে জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয় বেশ কিছু তথ্য সরবরাহকারীকে। বিনিময়ে প্রত্যেককে শিকার করা মাছের ভাগ দেওয়া হয়। এদের কাজ হলো নদী পাড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নদীতে অভিযানে নামলেই মা ইলিশ নিধনকারী মৌসুমি জেলেদের সাবধান করে দেওয়া।

তবে মৌসুমি জেলেদের নৌকা জব্দ করা গেলে ইলিশ নিধনের হার কমানো সম্ভব হবে। অন্যথায় অভিযান করে তেমন সফলতা পাওয়া যাবে না। জেলেরা জানান, বর্তমানে প্রচুর ইলিশ জালে উঠছে। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি নিরাপদ। তাই তারা রাতেই বেশি জাল ফেলছেন। বিক্রির জন্য তাদের কোনো চিন্তা করতে হয় না। সাধারণ ক্রেতারা নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন মাছ কেনার জন্য। কিছু ক্রেতা মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন। ফোন দিলেই তারা এসে মাছ নিয়ে যান।

জেলা মস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই জেলেদের সরকারি নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমরা যখনই সংবাদ পাচ্ছি তখনই সে এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত বেশকিছু জাল জব্দ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান ২৪ ঘন্টা চলছে ও পর্যাপ্ত টহলের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু মৌসুমি জেলেরা ফাঁকে ফাঁকে ও রাতের আধারে জাল ফেলে মা ইলিশ শিকার করছে।