একাধিক বিয়ে, শ্বশুরদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন আরাভ খান
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম। দুবাইয়ের এই স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেশে থাকতে একাধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর শ্বশুরদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন তিনি।
আট বছর আগে শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতে গিয়ে গুলি ভর্তি রিভলবারসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাভ খান। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেন ডিবি পশ্চিমের উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু। আরাভ খান শুধু সেকেন্দর আলী নন, অন্যান্য শ্বশুরদেরও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন, মামলার এজাহারে এমনটাই উল্লেখ করেন বাদী। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালতে বিচারাধীন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ডিএমপির পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব-উর রশিদ সংবাদ পান যে, আদালতে বিচারাধীন শাহআলী থানায় দায়ের করা মামলায় এজাহারনামীয় আসামি রবিউল ইসলাম আপন জামিনে মুক্ত হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় মগবাজারের আমবাগানে তার শ্বশুরবাড়ির সামনের রাস্তায় অবস্থান করছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে রবিউল দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। এরপর জিজ্ঞাসাবাবে রবিউল স্বীকার করেন যে, তিনি তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য গুলি ভর্তি রিভলবারসহ এই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলভার যা বাটসহ লম্বা অনুমান আট ইঞ্চি, সেটি জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল আরও জানায়, তিনি এর আগে একাধিক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তিনি ভয়ভীতি ও প্রভাব খাটিয়ে শ্বশুরের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করতেন। এ ঘটনায় রবিউলের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
ওই মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান রবিউল। এরপর জামিনে গিয়ে পলাতক থাকায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আছে।
আগামী ২৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ারের সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তিনি বলেন, সাক্ষী দিতে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন পেয়েছি। নির্ধারিত দিনে সাক্ষী দিতে আমি আদালতে যাব।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সবগুলো মামলায় তিনি পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। যেসব মামলা সাক্ষ্যের জন্য আটকে আছে, আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সেগুলোতে সাক্ষী হাজির করার উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করছি, শিগগিরই মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।
২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় উলুখোলা এলাকার একটি জঙ্গল থেকে পুলিশ পরিদর্শক মামুনের হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল ইসলাম। দেশ থেকে পালিয়ে তিনি প্রথমে ভারত যান। কলকাতার একটি বস্তিতে কয়েকবছর বসবাস করার পর তিনি আরাভ খান নামে ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে দুবাই চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। সম্প্রতি বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে একটি স্বর্ণের শোরুমের উদ্বোধন করেন তিনি। যেখানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের বেশ কয়েকজন তারকাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। এরপর থেকেই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে তার। আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ।