বোতল দিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি হলো পূজার গেট
সাত হাজার পানির খালি বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শারদোৎসবের একটি গেট। যেখানে রয়েছে চলতে পথে চোখ আটকে যাওয়ার মতো নান্দনিকতা। অভিনব এ গেট তৈরি সাড়া ফেলেছেন যশোর শহরের বিমানবন্দর সড়কের গোরাপাড়া মন্দির কমিটির সদস্যরা।
যশোর পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোরাপাড়ায় তৈরি করা হয়েছে এটি। গেটের প্রায় ৫০ গজ দূরে গোরাপাড়া সর্বজনীন পূজা মন্দির। রাস্তার দুই পাশজুড়ে এবং ওপরে লাগানো হয়েছে মরিচবাতি।
মন্দির কমিটি জানান, দুর্গাপূজাকে ঘিরে গোরাপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের সবসময়ই নতুন কিছু করার ইচ্ছে থাকে। এজন্য প্রতিবছর পূজার গেটে আনা হয় নতুনত্ব, তেমনি প্রতিমাগুলোতেও আনা হয় ভিন্নতা। সেই ইচ্ছে থেকে এবার পানির খালি বোতল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৬ মাস ধরে সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের কোমল পানীয়র বোতল। গত দুমাস ধরে ১৫ থেকে ১৬ জন মিলে বোতলগুলো চিকন তার দিয়ে গেঁথে ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে। এরপর তা বাঁশের তৈরি তোরণে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক এ গেট।
পূজার প্রথম দিনেই এ গেটের খবর ছড়িয়ে পড়ায় তার দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। মানুষের মধ্য সাড়া ফেলতে পারায় খুশি এর সঙ্গে জড়িত সকলে। গেট নির্মাণের মূল কারিগর সজিব দাস বলেন, অভিনব এই গেটে ৭ হাজার ২০১ টি খালি বোতল, প্রায় ১৫ কেজি পেরেক, ১০ কেজি তার এবং প্রায় ৩০ সিএফটি কাঠের বাটাম ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা ১৫ থেকে ১৬ জন দুমাস ধরে বোতলগুলো ফ্রেম আকারে সাজিয়েছি। এরপর বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ও শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুদিন ধরে গেটটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয়েছে।
গোরাপাড়া সার্বজনীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপংকর দাস বলেন, আমরা প্রতিবারই সবার চেয়ে একটু আলাদা কিছু করার চেষ্টা করি। সেই ধারণা থেকেই মন্দির কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে পরিত্যক্ত পানির বোতল দিয়ে গেট বানানোর উদ্যোগ নিই। আমাদের এলাকারই বাসিন্দা সজিব দাস, সাজু দাস আর শিপলু দাসসহ আরও কিছু তরুণ প্রায় ৬ মাস ধরে পানির বোতল সংগ্রহ করে। সঙ্গে কিছু বোতল কেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে গেটটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গেট নির্মাণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রচুর মানুষ দেখতে আসছে। তারা গেটের সামনে ছবি তুলছে। আমাদের মন্দিরের গেট নিয়ে মানুষের উৎসাহ দেখে তাদের ভালো লাগছে।
গেট দেখতে আসা মরিয়ম বেগম নামে এক নারী বলেন, পাশেই আমাদের বাসা। বোতল দিয়ে গেট নির্মাণের খবর শুনে দেখতে এসেছি। এমন অদ্ভুত বুদ্ধি খাটিয়ে গেট নির্মাণ করে তারা সবার নজর কেড়েছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি ভরত দাস বলেন, পূজার গেটে নতুনত্ব আনতে ও পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা এ অভিনব কাজটি করেছি। মানুষ বিষয়টিকে গ্রহণ করেছে দেখে ভালো লাগছে। পূজা শেষে আমরা এই গেটে ব্যবহৃত বোতলগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলব। আমরা বলতে চাই এ ধরনের বোতল রাস্তায় ড্রেনে না ফেলে তা ধ্বংস করা হোক। যাতে আমাদের পরিবেশটা সুন্দর থাকে।
প্রসঙ্গত, যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত গোরাপাড়ায় ১২০টি হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবার বসবাস করেন। এ পরিবারগুলো নিজস্ব মন্দিরে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আয়োজন করে।