বিলেতে বাঙালী কমিউনিটির অন্যতম শীর্ষনেতা কবি আবুল বশর আনসারী’র ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
শহিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি:
বন গাঁও’র বশর মিয়া অকথিত ইতিহাসে বাবার প্রতিচ্ছায়া-সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন।
বৃহত্তর সিলেটের প্রবীন রাজনীতিক, বিলেতে বাঙালী কমিউনিটির অন্যতম শীর্ষনেতা কবি আবুল বশর আনসারীর আজ পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু বশর চাচাকে নিয়ে তাঁর জীবদ্দশায়ই লিখেছিলাম এই লেখাটি।
যেসব ঘটনা অংশ হওয়ার দাবি রাখে, তার সবগুলোই কি ইতিহাসে স্থান পায় ? অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সংগ্রামের সাথে গ্রামীন জনগোষ্ঠির সম্পৃক্ততার সব গল্প কি ইতিহাসের অধ্যায় হতে পেরেছে ? সুনামগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের প্রবীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু জনাব আবুল বশর আনসারীর ফেলে আসা সংগ্রামী দিনগুলোর গল্প শুনলে উপরোক্ত প্রশ্নের সহজ উত্তর হয় না। গল্পের সিড়ি ধরে তিনি যখন আমাদের নিয়ে প্রবেশ করেন ইতিহাসের অন্দরে তখন রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে মফস্বলের মানুষের আপোষহীন ভূমিকার কথা খুব একটা খুঁজে পাইনা।
আমাদের পিতৃপ্রজন্মের কাছে “বনগাঁওর বশর মিয়া” নামে পরিচিত আবুল বশর আনসারী একজন ত্রিকালদর্শী রাজনীতিক, কবি ও লেখক। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ হয়ে সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর রয়েছে বর্নাঢ্য রাজনীতির অতীত। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এই নেতার স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে দলীয় এমপি হওয়ার মত যথেষ্ট গৌরবোজ্জল অতীত থাকলেও কোন সময়ই এই পদের জন্য লালায়িত ছিলেননা। প্রয়াত জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ ও আমাদের এলাকা জগন্নাথপুর-দক্ষিন সুনামগঞ্জের সাবেক এমপি প্রয়াত আব্দুর রইছ এডভোকেটের পক্ষেই সব সময় থেকেছেন সরব। ব্রিটেনে বাঙালী কমিউনিটির আজকের যে সুদৃঢ় অবস্থান এর পেছনেও অন্যান্য অনেকের মত তারও রয়েছে বিরাট অবদান।
৯২ বছর বয়সী সিলেট অঞ্চলের এই প্রবীন রাজনীতিক আমার বাবা মরহুম সৈয়দ আহবাব আলীর (আবুল মিয়া) ঘনিষ্ট বন্ধু, রাজনৈতিক সহযোদ্ধা। যদিও তাঁরা একদলের কর্মী ছিলেননা, কিন্তু বন্ধুত্ব ছিলো আজীবন। সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তর সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহকারী সম্পাদক আবুল বশর আনসারীর মাঝে আমি দেখতে পাই আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগে লোকান্তরিত হওয়া আমার বাবার প্রতিচ্ছায়া। প্রবীন এই রাজনীতিক নিজেই যেন অকথিত ইতিহাসের এক পান্ডুলিপী। তিনি ইতিহাসের এমন এক তথ্যভান্ডার, যে ভান্ডারে জমা রয়েছে আমাদের অঞ্চল তথা অবিভক্ত ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অকথিত অধ্যায়
ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির অনেক কুটিল সমীকরণের স্বাক্ষী জনাব আবুল বশর যখন আমাকে বললেন ধর্মের ভিত্তিতে দুটো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের বাস্তবতা এটি প্রমানের জন্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য নেতাদের নির্দেশে আমাদের কলকাতা পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তখন আমি বুঝে নেই সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির প্রকাশ্য অনুসঙ্গ হয়ে ওঠা এই সাম্প্রদায়িকতা নামক অস্ত্রের ব্যবহার শুধু আজই নয়, রাজনীতিতে সব সময়ই ছিলো। ভারত ভাঙ্গার দায় যে তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা এড়াতে পারেননা, নিজের লেখা ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’র নিজের জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত ৩০ পৃষ্ঠায় মাওলানা আবুল কালাম আজাদ যেমন এটি বলে গেছেন ধর্মের ভিত্তিতে ভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লোভে নেতারাই সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিতেন সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে এটি প্রকাশ না করলেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দুয়ারে দাড়িয়ে সেই সত্যটিই যেন ঠিক তেমনি প্রকাশ করলেন আবুল বশর আনসারী।
অবিভক্ত ভারতের জাতীয় নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদের চিন্তাধারার সাথে একজন জেলা পর্যায়ের রাজনীতিক আবুল বশর আনসারীর চিন্তাধারার এই অদ্ভুত মিল আমি বিষ্ময়ভরা চোখে অনুধাবন করি। সদ্য স্বাধীন ভারত ও তাঁর সহযোদ্ধা নেতারা বিব্রত হবেন, এই আশঙ্কা থেকে মাওলানা আজাদ তাঁর লেখা ‘ইন্ডিয়া উইন্স ফ্রিডম’ বইয়ের ৩০টি পৃষ্টা যেন নিজের মৃত্যুর ৫০ বছর পর প্রকাশিত হয় এমন উইল করে গিয়েছিলেন, যদিও দিল্লী হাইকোর্টের নির্দেশে মৃত্যুর ৩০ বছর পরই এই পৃষ্ঠাগুলো প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার দাবিতে গ্রাম পর্যায়ের একজন আন্দোলনকর্মী আবুল বশর আনসারীও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিবেশ সৃষ্টির নেতাদের নির্দেশের কথাও যেন ঠিক তেমনি কোন এক বিশেষ কারনে এতদিন গোপন রেখে মৃত্যুর আগে প্রকাশ করে গেলেন, তাঁর এই সত্য প্রকাশ নিশ্চয়ই ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এগুলোতো ইতিহাসেরই অংশ, যা হয়তো এতদিন প্রকাশ হয়নি।
১৯৯৫ সালে লন্ডনে আসার পর বশর চাচার সাথে ঘনিষ্টতা আমার। এর আগে শুধুই নাম জানতাম। ১৯৮৯ বা ৯০ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলে আমি যখন আমার রাজনৈতিক দল মনোনিত অন্য এক প্রার্থীর প্রচারনায় ব্যস্থ তখন আমার মা আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমার প্রচারণায় তুমার বাবার ঘনিষ্ট বন্ধু বশর মিয়া সাহেবের যেন কোন অসম্মান না হয়, খেয়াল রেখো।’ চাচা তখন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আমি যখন কাজ করতাম তখন লন্ডনে সাপ্তাহিক সিলেটের ডাক ও নতুন দিন অফিসে চাচা প্রায়ই আসতেন নিজের লেখা নিয়ে, গল্প করতেন দীর্ঘক্ষন বসে। লন্ডনে প্রথম যেদিন দেখা হলো, আমার পরিচয় পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন বেশ কিছু সময়। বার বার স্মৃতিচারণ করছিলেন আমার বাবার। মরনব্যাধিতে আক্রান্ত আমার বাবার প্রতিচ্ছায়া ‘বনগাওর বশর মিয়া’ সাহেবকে দেখতে সম্প্রতি গিয়েছিলাম লন্ডনের নিউহ্যাম হাসপাতালে। প্রায় দুইঘন্টা ছিলাম তাঁর পাশে। আমাকে পেয়েই ইতিহাসের ঝুড়ি খুলে স্মৃতিচারণ শুরু করেন। এসব স্মৃ্তিচারণ ইতিহাসের অপ্রকাশিত অংশ বলেই আমি মনেকরি। স্মৃতিচারণে যেমন উঠে এসেছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ঠিক তেমনি ছিলো আমাদের পরিবার ও গ্রামের কথা।
৪০ দশকের প্রথম দিকে সদ্য কৈশোর পেরুনো দুই গ্রামীন তরুণের ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহনের গল্প যখন বলছিলেন তিনি, তখন আমি নিজের অজান্তেই বলে উঠি এটিতো ইতিহাসের অংশ। বললেন আমি ও তুমার বাবা ছিলাম কংগ্রেসের চোঙ্গা ফুঁকা কর্মী। কেশবপুর জমিদার বাড়ীতে বসতো আমাদের নেতাদের নিয়মিত গোপন বৈঠক। একদিন এই বৈঠকে বাহির থেকে একজন হিন্দু নেতা আসলেন অতিথি হয়ে। স্থানীয় নেতা তাঁর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলে উত্তরে তিনি বললেন, মুসলমানের ছেলে রাজনীতিতে, ইন্টারেষ্টিংতো।
বললেন সেই মুহূর্তেই আমার কংগ্রেস জীবনের ইতি ঘটে। সরাসরি চলে আসি মুসলিম লীগের তৎকালীন স্থানীয় নেতা শরিয়ত উদ্দিনের কাছে। যোগ দেই মুসলিম লীগে। আব্বা সম্পর্কে বললেন তুমার বাবা রইলেন কংগ্রসেরই সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত জমিওতে উলামায়ে হিন্দ এ। আমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে, উনি অবিভক্ত ভারতের। আমাদের দায়িত্ব কিন্তু রয়ে গেলো আগের মতই। আমি মুসলিম লীগের চোঙ্গা ফুঁকি আর তুমার বাবা জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তথা কংগ্রেসের। এই চোঙ্গা ফুঁকতে ফুঁকতেই আমরা দুজন এক সময় ভালো বক্তা হয়ে উঠেছিলাম। পরবর্তীতে নেতৃত্বের পর্যায়েও উঠে আসি।
বললেন পার্টির প্রচারণায় চোঙ্গা ফুঁকতে ফুঁকতে তুমার বাবা ও আমি যখন মুখোমুখি হতাম তখন অনেকেই মনে করতেন হয়তো এই লেগে গেলো। আমাদের মধ্যে যাতে ঝগড়া না লাগে তারজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন ‘ডিকশনারী’ নামে পরিচিত তুমার চাচা সৈয়দ আরজুমান্দ আলী। তখনকার সময়ের ইংরেজীতে ইউনিভার্সিটি অনার্স ডিগ্রীধারী আরজুমান্দ আলী ইংরেজী বানানে খুবই পারদর্শী ছিলেন বলে তাঁকে ‘ডিকশনারী’ নামে ডাকা হতো।
স্মৃতি হাতড়ে বশর চাচা তুলে আনলেন আরও অনেক চমকপ্রদ ঘটনা। বললেন, ‘তখনকার সময়ে মিছিল মিটিংয়ে মাইকের কোন ব্যবহার ছিলোনা।
টিনের চোঙ্গা মুখে লাগিয়ে বক্তারা বক্তৃতা দিতেন। আমরা যারা বক্তৃতা বা সভার প্রচারণায় চোঙ্গা ফুকতাম, তারা নদীর জলে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম দীর্ঘক্ষন। বলা হতো এতে নাকি গলার আওয়াজ বড় হয়’। বশর চাচা বললেন, ৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম হলো দুটো রাষ্ট্র ইন্ডিয়া-পাকিস্তান। আমরা সিলেটের জনগন গণভোটে নির্ধারণ করলাম কোন রাষ্ট্রে আমরা থাকবো।
এই গণভোটে আমার বন্ধু, তুমার বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ার পক্ষে, আর আমি পাকিস্তানের। দেশ বিভাগের প্রাক্ষালে নেতা মৌলানা জমিলুল হকের সাথে তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে’। হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলীম লীগ, এরপর মুসলিম বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির তিন কালের স্বাক্ষি আবুল বশর আনসারী। বললেন, ‘সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করি আমরা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর শুরু থেকেই তুমার বাবার সম্পর্ক সৃষ্টি হয় মাহমুদ আলী, বরুন রায় ও পীর হবিবুর রহমানের মত বামধারার নেতাদের সাথে।
আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বামধারার নেতারা ন্যাপ গঠন করলে তুমার বাবাও যোগ দেন ন্যাপে। বিয়ে করেন পীর হবিবুর রহমানের শ্যালিকা তুমার মাকে। সেই থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় পর্যন্ত তিনি ন্যাপেই ছিলেন। আর আমি রয়ে গেলাম আগের মতই আওয়ামী লীগে। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আমরা দু বন্ধুই সাধ্যমত ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি।
রাজনীতিতে আজ আর সেই সহনশীলতা নেই এমন আক্ষেপভরা মন্তব্য করে বশর চাচার স্মৃতিচারণ তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্ধিতার মধ্যেও তুমার বাবা আমাকে ‘নেতাজি’ উপাধী দিয়েছিলেন, আজকের দিনেতো তা কল্পনাই করা যায়না। তুমার বাবা ছিলেন একজন বইপোকা মানুষ, এমন মন্তব্য করে হাসপাতালের বেডে শায়িত বশর চাচা বললেন, আমাদের বন্ধুদের মধ্যে তুমার বাবার মত বই পড়ুয়া আর কেউ ছিলোনা। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের জন্য বই বা ডকুমেন্ট পড়ার প্রয়োজন পড়লেও আমরা মনে করতাম কষ্ট করে পড়ে কি লাভ আবুল মিয়ারতো পড়াই আছে, তাঁর কাছ থেকে জেনে নেবো।
বললেন, ঐ সময়ই তুমার বাবা বাড়ীতে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব লাইব্রেরি। তুমার স্কুল শিক্ষিকা দাদী তৎকালীন সময়ে আমাদের এলাকার নারী জাগরণের একজন কারীগর হিসেবে সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। ছেলের বইপোকা হওয়ার পেছনে তাঁর ছিলো প্রভাব।
তখনকার সময়ে রাজনীতিতে আমাদের গ্রাম সৈয়দপুরের নাকি খুবই গুরুত্ব ছিলো।সৈয়দপুর বড়গোল মাটে যারা বক্তৃতা করতে পারবেন তারা সিলেটের গোবিন্দচরন পার্ক বা ঢাকার পল্টনে বক্তব্য রাখার যোগ্যতা রাখেন-এমনটিই বলা হতো ঐ সময়। ঐ বড়গোল মাটে ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চ থেকে কত বক্তৃতা যে দিয়েছি আমি ও তুমার বাবা-স্মৃতিচারণ বনগাঁওর বশর মিয়ার।
আবুল বশর আনসারীর দীর্ঘ স্মৃতিকথা ইতিহাসের অংশ বলেই আমার মনে হয়েছে। কৈশোর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য জীবনের পুরো সময় দেশের মানুষের জন্য ব্যয় করা এই সংগ্রামী মানুষটি আজ মরনব্যাধিতে আক্রান্ত। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অকুতোভয় এই কিশোর কর্মী মধ্যবয়সে বাংলাদেশের জন্ম সংগ্রামেও ভূমিকা রেখেছেন। ইতিহাস কি এদের মনে রাখে ? আবুল বশর আনসারীর সাথে কথা বলার সময় আমার পাশেই ছিলেন ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তাঁর মেয়ে জনেথ রহমান। ছিলেন বাংলাদেশের আরেক রাজনৈতিক পরিবারের পূত্রবধু নার্গিস কবির।
নার্গিস আমাকে প্রশ্ন করলেন, ইন্ডিয়া তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এখনও রাষ্ট্রিয়ভাবে সম্মান জানায়, দেখভাল করে। বশর চাচার মত যেসব ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী আমাদের দেশে এখনও বেঁচে আছেন বাংলাদেশ সরকার কি তাদের দেখভাল করতে পারেনা ? আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি। তাঁকে বলতে পারিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পরও যে বাংলাদেশে এখনও মুক্তিযাদ্ধা হয় রাজাকার আর রাজাকার হয় মুক্তিযোদ্ধা ৭১ বছর আগের ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন কর্মীকে নিয়ে সেই দেশের চিন্তা করার কি কোন সময় আছে।
বাবার প্রতিচ্ছায়া আজীবন সংগ্রামী আবুল বশর আনসারীর প্রতি আমাদের যত শ্রদ্ধা। ইতিহাসের না জানা অধ্যায়গুলো আমরা জেনেছি তাঁর কাছ থেকে আমরা এটি পৌছে দেবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বেঁচে থাকবেন ‘বনগাওর বশর মিয়া’রা যতদিন আছেন শান্তিতে থাকুন চাচা আপন আলোয় উদ্ভাসিত করুন আমাদের।