ঘাত প্রতিঘাতের ম্যধ্যেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া অটুট

ঘাত প্রতিঘাতের ম্যধ্যেও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া অটুট

শ‌হিদুল ইসলাম, বি‌শেষ প্রতি‌নিধিঃ

শুক্রবার ২৪ নভেম্বর, বিশ্ব ব্যাপী বাঙালিদের একমাত্র সংগঠন বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এবং বাংলাদেশের সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে “মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ : সমাজ ও গণতন্ত্র” শীর্ষক এক আলোচনাচক্র   অনুষ্ঠিত হল দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ মুখার্জি স্মৃতি মিলনায়তনে। 

 আলোচনাচক্রে মূল বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক, বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের উপ রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার,

 সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশে বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের কো-অর্ডিনেটর  ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর, এবং সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

প্রবীণ বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এই আলোচনাসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি, কলকাতার বিশিষ্ট আইনজীবী, সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র, বিজ্ঞানী পার্থ ঘোষ, সাহিত্যিক নবকুমার বসু প্রমুখ।

সঞ্চালক হিসেবে আলোচনাসভার সুরটি বেঁধে দেন বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আহ্বায়ক সৌম্যব্রত দাস। 

প্রথম বক্তা  স্নেহাশিস সুর মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ও বর্তমান বিশ্লেষণ করেন।  তিনি বলেন, চারের দশকের অস্থির সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন শুরু হয়েছিল। ৫২'র ভাষা আন্দোলন তাতে আরও গুরুত্ব সংযোজন করে। ইতিহাস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিশেষত্ব হল, এই সংগ্রাম ছিল পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক, বাঙালি জাতিসত্ত্বার পরিচায়ক। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সমাজে ধর্মীয় বিভাজন, মৌলবাদীদের অতি-তৎপরতা উপমহাদেশের সব দেশেই আছে। তার মধ্যেও বাংলাদেশ বরাবরই সংখ্যালঘুদের পাশে থেকেছে। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশকেই মুক্ত চিন্তার প্রসার আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপরাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলার সময় বাঙালি আবেগের কথা বলি। কিন্তু মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু সাত মার্চের ভাষণে যে মুক্তির কথা বলেছিলেন, সেখানে অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও ছিল। তিনি বলেছিলেন, আমাদের চাই ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার। একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূলেই রয়েছে এই অর্থনীতির কথাটি। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অধিকার থাকতে হবে। আর আমরা তাকেই নির্বাচিত করব, যে আমার ভাতের অধিকার সুনিশ্চিত করবে। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। তারপর এসেছে দেশ গড়ার সময়। সেটাও মূলত একটা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াই। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীনই হঠাৎ বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। আবার নতুন করে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। বর্তমানে বাংলাদেশের বিশাল অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আমাদের বলেন, ইনক্লুসিভ জিডিপি এবং টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর রাখতে হবে। 

নানা সমস্যার মধ্যেও তিনি আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি বলেন, সমালোচনা, ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশ যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিল, তা আজও বহমান। এবং আমি আশাবাদী এই প্রক্রিয়া সামনের দিকেই থাকবে।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সংস্কৃতি - সর্বক্ষেত্রেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি। তাই আমার অভিজ্ঞতা মেঠো অভিজ্ঞতাই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির পর আজকের বাংলাদেশে পৌঁছতে অনেক ভুলত্রুটি হয়েছে। কিন্তু সেই ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পেরেছে, সেটাই বড় কথা। তিনি বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে বাংলাদেশ। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও চলেছে। তার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভিত। মাঝে মাঝেই বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে পাকিস্তানের দিকে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সেটা আবার প্রতিরোধও করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, হিন্দু - মুসলমান নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক সমাজচেতনা ঢাকায় বা কলকাতায় বসে ততটা ভাল বোঝা যাবে না। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে গেলে বোঝা যাবে এই চেতনা কতটা গভীরে প্রোথিত।

পবিত্র সরকার বাংলাদেশে ছোটবেলায় থাকার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে বলেছেন, এই আলোচনায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং সমাজব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ আর প্রত্যাশা দুটি দিকই উঠে এসেছে। তবে সে দেশটির দীর্ঘ আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু আশার কথাই বলে।  

সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমি গত ২২ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ঘটতে দেখেছি। বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে অবস্থা থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব।